সাম্প্রতিক বাংলাদেশের এক কলেজ ছাত্র ব্লু হোয়েল এর শিকার হয়েছে।পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
নিল তিমি সম্পারকে জানি
ধাপে ধাপে প্ররোচিত করে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া কথিত অনলাইন গেম ব্লু হোয়েল (নীল তিমি) বাংলাদেশে খেলা হচ্ছে—এ ধরনের প্রামাণিক কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একজন স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ব্লু হোয়েল গেম খেলার কারণে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। মূলত এর পরপরই ফেসবুকে ব্লু হোয়েল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ ও মেয়েটির পরিবার নিশ্চিত করেছে, এই আত্মহত্যার ঘটনার সঙ্গে ব্লু হোয়েল গেমের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। মেয়েটির মৃতদেহে গেমের বৈশিষ্ট্যের কোনো চিহ্ন ছিল না।
এদিকে ব্লু হোয়েল গেমের বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা শুনেছি, ইন্টারনেট-নির্ভর একটি গেমে আসক্ত হয়ে একজন আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’
মানসিক বিকারগ্রস্ত এক রুশ তরুণের তৈরি ব্লু হোয়েল এমন একটি অনলাইন গেম, যা ইন্টারেনেটে প্রকাশ্য কোনো ওয়েবসাইটে (পাবলিক ডোমেইন) পাওয়া যায় না। ইন্টারেনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আমিনুল হাকিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই গেম কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ স্টোরে থাকে না। কারও কাছ থেকে পাওয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানা (লিংক) থেকে গেমটি নামিয়ে (ডাউনলোড) নিয়ে খেলতে হয়। বাংলাদেশে কোনো নেটওয়ার্কে এখনো ব্লু হোয়েলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’
এমন মরণঘাতী গেম এই প্রথম নয়; এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্রেনজার মেন নামের একটি উইন্ডোজভিত্তিক গেম তৈরি করা হয়েছিল। সেটির কারণে দুজন গেম খেলোয়াড় মারা গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, ব্লু হোয়েলের মতো গেম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ইনস্টাগ্রামসহ কয়েকটি মাধ্যমে এরই মধ্যে গেমটির লিংক বা ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুমন আহমেদ এই ব্লু হোয়েলকে গেম নয়, বরং একটি অপরাধচক্র হিসেবেই মনে করেন। এই গেম কারিগরিভাবে বন্ধ করার কিছু নেই, এটি ঠেকাতে হবে সামাজিক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে। যাদের মধ্যে মানসিকভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে, তারা যাতে এ গেম খেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
২১ বছর বয়সী রুশ ছাত্র ফিলিপ বুদেইকিন ২০১৩ সালে প্রথম ব্লু হোয়েল গেমটি তৈরি করেন। তাঁর পড়াশোনার বিষয় ছিল মনোবিজ্ঞান। এই গেম ২০১৬ সাল থেকে ছড়াতে থাকে। গেমটির মূল লক্ষ্য দুর্বলচিত্তের মানুষ, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা। চলতি বছর পর্যন্ত রাশিয়া, ভারতসহ ব্লু হোয়েল খেলে বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর এসেছে। ইউটিউবের অনেক ভিডিওতেও এগুলোর কিছু নমুনা পাওয়া গেলেও তার বেশির ভাগই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ব্লু হোয়েল অন্য গেমগুলোর মতো ইন্টারঅ্যাকটিভ নয়। এই গেমে খেলোয়াড়ের কাছে লিখিত বার্তায় গেম প্রশাসকের নির্দেশনা আসে। সেখানে একটা একটা করে কাজের নির্দেশ বা চ্যালেঞ্জ থাকে। সে কাজটা করার পর ছবি তুলে বা ভিডিও করে গেম প্রশাসককে পাঠাতে হয়। এভাবে ৫০তম ধাপ বা ৫০তম দিনে সবশেষ নির্দেশটি আসে। এই নির্দেশ হলো আত্মহত্যা করার।
তথ্যপ্রযুক্তি নৈতিকতাবিষয়ক গবেষক ইউনিভার্সিটি অব ওলংগং ইন দুবাইয়ের সহযোগী অধ্যাপক জিনাত রেজা খান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে বসে থাকা যাবে না। অপেক্ষা করার কোনো সুযোগই নেই। এই গেমের অস্তিত্ব বিশ্বে রয়েছে। ভারতে প্রামাণিক ভিডিও পাওয়া গেছে, যেখানে দেখা যায়, ব্লু হোয়েল খেলে আত্মহত্যা করেছে।’
জিনাত রেজা খান বলেন, ব্লু হোয়েলের নির্মাতা রুশ ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ছেলে মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে মনে করে, যাদের মানসিক শক্তি কম, যারা বিষণ্নতায় ভোগে, তারা ‘বায়োলজিক্যাল ওয়েস্ট’। এসব ‘জঞ্জাল’ পৃথিবী থেকে দূর করাই নাকি তার উদ্দেশ্য। তাই মা-বাবাদের সচেতন হতে হবে। সন্তানকে সময় দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে এ রকম গেমের চরম পরিণতি সম্পর্কে। শুধু মা-বাবা নয়, শিক্ষকদেরও এই গেম সম্পর্কে জেনে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। সচেতনতা ছাড়া এ রকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে না।
খবর বিভাগঃ
Hot News
0 comments: